
প্রাইম নারায়ণগঞ্জ:
রাস্তায় এলোপাতাড়িভাবে রাখা সিএনজি। বিঘ্নিত হচ্ছে যানবাহন চলাচল। নগরীর ব্যস্ততম রাইফেল ক্লাবের সামনে এমন দৃশ্য নিত্যদিনের। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির নেপথ্যে রাস্তা দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড। এ অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের কারণেই নগরীর ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু চাষাড়া পয়েন্টে এসেই সাধারণ মানুষের মূল্যবান কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।
শুধু চাষাড়ার রাইফেল ক্লাবই নয়, নগরীতে যানজট সৃষ্টির জন্য মহিলা কলেজের বিপরীতে চাষাড়া রেল স্টেশনের সামনে এভাবে গড়ে ওঠা আরো একটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডকে দায়ী করা হচ্ছে।
অবৈধ এসব স্ট্যান্ড উচ্ছেদে খোদ নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বারবার বললেও তা উপেক্ষিত রয়েছে। পুলিশ প্রশাসন বা ট্রাফিক বিভাগ বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষ কেউই স্ট্যান্ড উচ্ছেদে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। যদিও নগর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ স্ট্যান্ডগুলো বৈধ কোনো স্ট্যান্ড না। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, এসব অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড নিয়ে গত মাসের ২০২০-২১ সালের বাজেট অনুষ্ঠানে জালাময়ী বক্তব্য দেন নাসিক মেয়র আইভী। তিনি বলেন, এমপি সাহেব (শামীম ওসমান) যেখানে বসেন, সেই রাইফেল ক্লাবের পাশেই বেশ কয়েকটি অবৈধ স্ট্যান্ড। অথচ এমপি সাহেব কোনো ব্যবস্থা নেন না।
অনুসন্ধানে অভিযোগ পাওয়া গেছে, নগরের ভেতরে অবৈধ এ দুটি সিএনজি স্ট্যান্ড চালায় জনৈক নুরু ভাঙ্গারী। জামালপুর থেকে আগত এ ভাঙ্গারী নুরু একটি রাজনৈতিক দলের শ্রমিক নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এ সিএনজি স্ট্যান্ড দুটো পরিচালনা করে বলে জানায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সিএনজি চালক। তারা আরও বলেন, ভাঙ্গারী নুরুর উপরে শুধু ঐ শ্রমিক নেতারাই নয়, তাদের মাথায়ও হাত রয়েছে নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী এক যুব নেতার। যুব নেতার কথা উল্লেখ করলেও ভয়ে এ যুব নেতার নাম বলতে রাজী হন নি কেউ।
আরও জানা যায়, রাজনীতির পালাবদলের সঙ্গে এসব স্ট্যান্ডের কর্তৃত্ব হাত বদল হয়। এসব স্ট্যান্ড থেকে আয় করা অর্থ নেতাদের পাশাপাশি বিভিন্ন মহলের পকেটস্থ হয় বলেও জানা যায়। এক সিএনজি চালক জানায়, আগে এ দুটি স্ট্যান্ড পরিচালনা করতো জনৈক রিপন মিয়া। এ রিপন মিয়ার প্রায় সকল সভা-সমাবেশে দেখা যেত এক সময়ের তুখোড় এক ছাত্রনেতাকে, যিনি বর্তমানে মহানগর আওয়ামীলীগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে বহাল আছেন।
এদিকে, এ দুটি স্ট্যান্ডের প্রত্যেকটিতে প্রায় ৬০-৭০ টি হিসাবে মোট ১৩০-১৪০ টি সিএনজি চলে বলে জানা যায়। করোনার আগে এসব স্ট্যান্ড থেকে সিএনজি প্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকা হারে দৈনিক দশ হাজার টাকার বেশী হিসাবে মাসে প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা চাঁদা তোলা হতো বলে জানা গেছে। করোনার কারণে মাস ৬য়েক এ চাঁদা নেয়া হয়নি বলেও জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে এ তথ্য নিশ্চিত করে জানায়, বর্তমানে আবার এ চাঁদা তোলা শুরু হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, রাইফেল ক্লাব সংলগ্ন রাস্তায় ও মহিলা কলেজের বিপরীতে দুটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড করা হয়েছে। এখানে প্রায় ২০-৩০ টি করে সিএনজি সবসময় দাড়িয়ে থেকে যানজটের সৃষ্টি করছে। এসব সিএনজিগুলো যখন ঘুরানো হয় মূলত তখনই বেশী যানজটের সৃষ্টি হয়।
সিএনজি স্ট্যান্ড দুটি পরিচালনায় যার নাম আসছে সেই ভাঙ্গারী নুরু প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানায়, আমি কেন সিএনজি স্ট্যান্ড পরিচালনা করবো। সিএনজি চালকরাই সিএনজি চালায়। প্রয়োজনে আপনি সরেজমিনে এসে দেখতে পারেন। আপনি স্ট্যান্ডে আসেন, আমিও আসছি।
এদিকে নাসিক কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অবৈধ স্ট্যান্ড ও অবৈধ গাড়ির উপর আমাদের অভিযান অব্যাহত। আজও আমরা প্রায় ২২ টি অবৈধ অটোরিক্সা, ইজিবাইক আটক করেছি। নগরীর রাইফেল ক্লাব ও মহিলা কলেজের সামনের যে দুটি অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ড আছে সেখানেও আমাদের অভিযান চালানো হবে বলেও জানায় নাসিক কর্তৃপক্ষ। তারা আরও জানায়, এক্ষেত্রে পুলিশকে একটি বড় ভুমিকা রাখতে হবে।
একই বিষয়ে ট্রাফিকের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানায়, আমরা আজও এসব অবৈধ স্ট্যান্ডে অভিযান চালিয়েছি, র্যাকার করেছি। তারপরও আমি এ দুটি অবৈধ স্ট্যান্ড উচ্ছেদের বিষয়ে আমার টি আই কে লিখিতভাবে চিঠি ইস্যু করছি।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম প্রাইম নারায়ণগঞ্জকে জানান, আমাদের অভিযান অব্যাহত। এএসপি সালেহ উদ্দিন স্যারের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবো।
No posts found.